নাজমুল হোসেন
নিজস্ব প্রতিবেদক
যত দিন যাচ্ছে ততদিনে বাড়ছে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে। জ্বর, ডেঙ্গু, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন নানান রোগী। রোগীর চাপে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের। প্রয়োজন মেটানোর উপযুক্ত জায়গা না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন অসুস্থ ব্যক্তিরা।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের শিশু শয্যার সংখ্যা মাত্র ১২টি। কিন্তু এই ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি ১০০ এর বেশি। একেকটি বেডে ৩ থেকে ৪ জন শিশু রোগীকে রাখা হয়েছে। আবার কোনো শিশু রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এসব শিশুদের সঙ্গে স্বজন রয়েছে এক বা দুজন করে। রোগী এবং স্বজনদের চাপে প্রতিটি ওয়ার্ডে চাপাচাপি ও অপরিষ্কার পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে আছে।
শুধু শিশু ওয়ার্ড নয়- পুরুষ ও মহিলা সার্জারি ওয়ার্ড, গাইনি ওয়ার্ডসহ পুরো হাসপাতাল জুড়ে রোগীর চাপ রয়েছে। হাসপাতালের বারান্দা, প্রতিটি ওয়ার্ডের মেঝে, করিডর, বাথরুমের সামনে, চলাচলের পথে এমনকি লাশঘরের সামনেও বিছানা পেতে রোগীদের চিকিৎসা দিতে দেখা গেছে। প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা হাজারের বেশি রোগীদের ভিড়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। আর রোগীরাও অসন্তুষ্ট সেবা নিয়ে।
বৃহস্পতিবার সকালে সদর হাসপাতালে গিয়ে ভয়াবহ এই চিত্র দেখা গেছে। হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার সার্জারি ওয়ার্ডে। বিভিন্ন রোগে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীরাও একই সঙ্গে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ওই ওয়ার্ডের আনাচে-কানাচে রোগীদের শয্যা বিছানো হয়েছে। চলাচলের পথেও রোগীরা ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। একই অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতালেও। এতে করে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে রোগী ও স্বজনদের।
এদিকে, হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তিরা জানান, তিন দিন আগে তাঁর মেয়ে জ্বরে আক্রান্ত হলে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এখনো হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। তবে জ্বর কমেনি। চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দিচ্ছে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রোগীর প্রচুর চাপ রয়েছে। বিশেষ করে ডেঙ্গুর চাপ সবচেয়ে বেশি। সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সচেতন না হলে ডেঙ্গুর প্রকোপ আরও বাড়বে। তাই সবাইকে বাড়ির আঙিনায় পরিষ্কার ও বাসায় মশারি টাঙিয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া নানা রোগে আক্রান্ত রোগী প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এতে করে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের’।
লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবির বলেন, ‘আবহাওয়া পরিবর্তন হচ্ছে। এতে করে নানান রোগের প্রকোপ বাড়ছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে শয্যার সংখ্যার চেয়ে অনেক রোগী হাসপাতালগুলোতে, অনেক চাপ রয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ মজুত রয়েছে। চিকিৎসার কোনো কমতি নেই। কোনো সংকট ও নেই’।