শিরোনামহীন ব্যান্ডের বিখ্যাত গানের আছে ‘এই অবেলায়’ বিখ্যাত গানের একটি লাইন ‘ কেউ কোথাও ভালো নেই’ সম্ভবত গানটি করেনার সময়কে ভেবেই লেখা। আসলেই কেউ কোথাও ভালো নেই। প্রতিদিনই মানুষ হুট করে নাই হয়ে যাচ্ছে। এক মৃত্যুভয় মানুষকে আটকে রেখেছিল ঘরের চার দেয়ালে। প্রিয়জনের কাছে স্বস্তি নেই, নিরাপত্তা নেই নিজের ঘরেও। মাথার উপরে মৃত্যু খড়গ হয়ে ঝুলেছিল । অস্বস্তি হয়ে গিয়েছিল প্রতিদিনের নিয়তি। এ পরিস্থিতিতে আসলেই কেউ কোথাও ভালো ছিল? অদ্ভুত বিব্রত লাগে যখন শুনি এই বিধ্বস্ত সময়ে এসেও মহামারীকে কেন্দ্র করে ব্যবসার ডোজবাজি নিয়ে বসেছিলেন কেউ কেউ। টাকার বিনিময়ে মিলেছিলো করোনার নেগেটিভ-পজিটিভ সার্টিফিকেট। জিহ্বায় আঙ্গুল ভিজিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা গুনছিলেন টাকা। আমরা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছিলাম অন্ধকারের কালীগোলা সেই টানেলে। নিজেদের বিবেককে নিজেরাই টেনে নামাচ্ছিলাম নিচে মানবিকতা দিচ্ছিল কাজে ইস্তফা। মিডিয়া তোলপার করছিল রিজেন্ট হাসপাতাল ও তার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদের নামে। যদিও জাতীয় পরিচয়পত্রে তার নাম শাহেদ করিম, তিনি নিজেকে পরিচয় দিতেন ভিন্ন নামে অর্থের ভ্যাকসিনে বানিয়ে দিতেন করোনা নেগেটিভ। বিচিত্র সব ব্যবসা, বিভিন্ন চলকের ভন্ডামি, দমবন্ধ করা জোচ্চুরির সাথে যুক্ত ছিল তার নাম। যেগুলোর আখ্যান পড়লে হয়তো মানুষ হিসেবে এই মানুষটির সাথে একই গোত্রভুক্ত হওয়ার কারণে খানিকটা লজ্জাও লাগবে আমাদের। হয়তো ভরসা বা বিশ্বাসের জায়গাটুকু আর একটু নড়ে যাবে। আবার হয়তো মানুষের ওপরে বিশ্বাস হারানো পাপ কথাটিকে মনে হবে ফাঁকা বুলি।
কোন লাইসেন্স ছাড়াই করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ ও চিকিৎসার নামে সরকারি তহবিল আত্মসাতের অভিযোগে ৬ জনের নামে মামলা হয়। গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর উপ-পরিচালক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারক জজ আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। এই ঘটনায় জড়িয়ে থাকার প্রমাণ পাওয়ায় অভিযোগ পত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ততকালীন মহাসচিব আবুল কালাম আজাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং চার্জশিটে তাকে পলাতক দেখানো হয়। ২০২০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর আজাদ ছাড়া বাকি ৫ জনের নামে মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
মামলার বিবৃতি অনুসারে, অভিযুক্তরা লাইসেন্স নবায়ন না করেই বন্ধ হয়ে যাওয়া রিজেন্ট হাসপাতালটিকে একটা ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে রুপান্তরিত করেছিল এবং অবৈধ সুবিধা নিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল।
সম্প্রতি আদালতে মামলার শুনানির সময় আদালতের অনুমতি নিয়ে মো. সাহেদ বলেন, ২০২০ সালে যখন করোনা রোগী দ্রুত বেড়েছিল, তখন ততকালীন স্বাস্থ্য সচিব সাহেদকে তার দুই হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসার প্রস্তাব দেন। প্রস্তাব পেয়ে তার হাসপাতালদুটিতে কোন ফি ছাড়াই করোনা রোগীদের নমুনা পরিক্ষা শুরু করেন এবং দেশে তার হাসপাতালই প্রথম করোনা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া শুরু করে বলে দাবি করেন তিনি। এতে আরও বলা হয়, তারা সরকার পরিচালিত ল্যাব নিপসোমে কোভিড-১৯ রোগীদের নমুনা পরিক্ষার মাধ্যমে এক কোটি ৩৭ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন।
আদালতে মো. সাহেদ আরও বলেছেন, তার বিরুদ্ধে যে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে, সেখানে নাকি মাত্র ১৩টি ভূয়া করোনার সার্টিফিকেট দেওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। তার দাবি নিপসোমের ওয়েব সাইটে গিয়ে সে সব তথ্য প্রদান করলে নাকি দেখা যায় সেসব রিপোর্ট সঠিক ছিল। যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে বিষয়টি নিয়ে কি ভাবাবে সাধারণ বিবেকেকে? দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের এখনও অনেক আস্থা আর বিশ্বাস রয়েছে। বিচার ব্যবস্থা আমাদের সবচেয়ে ভরসার জায়গা।
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক আল আসাদ মো. আসিফুজ্জামান এ মামলায় আবুল কালাম আজাদসহ পাঁচ জনের জামিন মঞ্জুর করেন। মামলায় জামিন পাওয়া অপর ৪ আসামি হলেন- সাবেক পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আমিনুল হাসান, উপপরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. ইউনুস আলী, সহকারী পরিচালক (হাসপাতাল-১) ডা. মো. শফিউর রহমান এবং গবেষণা কর্মকর্তা ডা. মো. দিদারুল ইসলাম। মামলায় মো. সাহেদ, আবুল কালাম আজাদ এবং বাকি ৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি স্থগিত চেয়ে দাখিল করা আবেদনও মঞ্জুর করে আদালত।
মো. সাহেদ করিম ও তার পরিবার সামাজিকভাবে আজ মানসিক টর্চারের মধ্যে রয়েছে। জামিনে থাকা অন্য আসামী ও তার পরিবারের ব্যাপারে মানুষ কিছু বলছে না। শুধু মো. সাহেদকেই অপরাধী বলা হয়েছে। এতে করে পরিবারের সদস্যদের ভিতর চাপা কষ্ট ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তার পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দেওয়ার মতো দায়িত্বশীল কেউ এগিয়ে আসেনি। একই মামলায় অন্যরা জামিনে থাকলেও মো. সাহেদের কেন জামিন হয় না প্রশ্ন অনেকের। আইনতো সবার জন্য সমান। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে মো. সাহেদের জামিন তার গণতান্ত্রিক অধিকার। তার পরিবারকে মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে ও সামাজিকভাবে একটু প্রশান্তির জন্য হলেও তার জামিন খুবই জরুরী বলে মনে করেন সু-শীল সমাজ।