চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণে নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি দূর করেছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মমিনুর রহমান। আজ সোমবার বিকেল ৫টার পর তিনি জানান, বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের প্রকৃত সংখ্যা হবে ৪১ জন।
এর আগে বিস্ফোরণে ৪৯ জন নিহত হয়েছেন বলে আজ অধিকাংশ গণমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তথ্য চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে নিশ্চিত করা হয় গতকাল রোববার। সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে নিহতের সংখ্যা ৪৯ জনের তথ্য রয়েছে।’
গতকাল সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জানান, নিহতের সংখ্যা ৪৫ জন। কিছুক্ষণ পর একজন বাড়িয়ে নিহত ৪৬ জন উল্লেখ করেন তিনি।
রাতে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়। সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন বলছে, লাশের সংখ্যা ৪৯ জন।
এর আগে গত শনিবার সন্ধ্যায় বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে হতাহতদের চমেক হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নিহতের হিসাব সংরক্ষণ করছিল চমেক হাসপাতাল পুলিশ এবং চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা।
আজ সকালে সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমরা নিহত ৪১ জনের লাশ পেয়েছি। যেগুলো পরে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’ তার এই সংখ্যার সঙ্গে মিল পাওয়া যায় চমেক হাসপাতালের তথ্যের সঙ্গে।
আজ সকালে চমেক হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামিম আহসান বলেন, ‘আমরা গত তিনদিনে ৪১টি লাশ গ্রহণ করেছি। লাশের ময়নাতদন্ত শেষ করেছি ১৮টির। আর ১১টি লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘গুরুতর আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১৪ জনকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। তাদের ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসা চলছে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এর মধ্যেও তিনজনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাদের ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
লাশের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে চমেক হাসপাতালের পরিচালকের কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, ‘আমরা যেসব লাশ গ্রহণ করেছি, সেগুলোর হিসেবে ৪১ জন।’
এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর। তখন লাশের বিভ্রান্তকর তথ্য নিয়ে তারা কোনো কথা বলেননি।
অবশেষে আজ বিকেলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান লাশের সংখ্যা নিয়ে সৃষ্ট বিভ্রান্তি অবসান করেন। তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মর্গে কিছু মরদেহ নেওয়া হয়েছিল। সেখানে একবার গণনা করা হয়। আবার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও সেগুলো গণনা করা হয়। তাতে সংখ্যা বেড়ে দাড়াঁয় ৪৯ জনে। পরে সব মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিক্যালের মর্গে নিয়ে আসা হলে সেখানে মরদেহ পাওয়া যায় ৪১ জনের। তাই মৃতের প্রকৃত সংখ্যা হবে ৪১ জন। এখন থেকে কোনো মরদেহ উদ্ধার হলে সেগুলো মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হবে।’
উল্লেখ্য, এ ঘটনায় কতজন আহত হয়েছেন, তার নির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রশাসন থেকে পাওয়া যায়নি। তেমনি কতজন এখনো নিখোঁজ রয়েছেন, তারও হিসাব নেই। এই ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
গত শনিবার রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোর ভেতরে আগুন লাগার পর বিস্ফোরণে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে আরও রয়েছেন ডিপোর কর্মকর্তা-কর্মচারী ও পরিবহন শ্রমিকেরা। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের সদস্যসহ দুই শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারী। এর মধ্যে পুলিশের এক সদস্যের পা বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।