সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন

ভোজ্যতেল আমদানি কমাতে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা

  • প্রকাশিত : বুধবার, ৮ জুন, ২০২২

দেশে বছরে ভোজ্যতেলের চাহিদা প্রায় ২৪ লাখ টন। এর মধ্যে সরিষা, তিল ও সূর্যমুখী থেকে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় কেবল ৩ লাখ টন, যা চাহিদার ১২ ভাগ। বাকি প্রায় ৯০ ভাগ ভোজ্যতেল আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে। আর সে কারণেই ২০২০-২১ অর্থবছরে খাবার তেল আমদানিতে সরকারকে ব্যয় করতে হয়েছিল প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।

এ বছর প্রথম ১০ মাসেই ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকার মতো। বাজারে এর বিরূপ প্রভাবও দেখা গেছে বেশ। তাই দেশে উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। খাতসংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন- ভোজ্যতেলে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হলেও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে দেশের চাহিদার বড় অংশই মেটানো সম্ভব। সে অনুযায়ী সরকারও সরিষাসহ অন্যান্য তেলজাতীয় ফসল চাষের পরিধি বাড়ানোর গুরুত্ব দিয়েছে। আমদানি নির্ভরতা কমাতে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।

সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে গতকাল মঙ্গলবার এক সভার আয়োজন করা হয়। ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে সেখানে মন্ত্রণালয়ের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আবদুর রাজ্জাক। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে সরিষা, তিল, বাদাম, সয়াবিন, সূর্যমুখীসহ তেলজাতীয় ফসলের আবাদ তিনগুণ বাড়িয়ে ৮ লাখ ৬০ হেক্টর জমি থেকে ২৩ লাখ ৬০ হাজার হেক্টরে উন্নীত করা হবে। আর ফসলের উৎপাদন ১২ লাখ থেকে বাড়িয়ে ২৯ লাখ টনে এবং তেল ৩ লাখ থেকে ১০ লাখ টনে উন্নীত করা কৃষি মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য।

কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘এ বছর দেশে ভোজ্যতেল নিয়ে সংকট চলছে। অনেক বেশি দাম দিয়ে বিদেশ থেকে তেল আনতে হচ্ছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুযায়ী ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আমরা তিন বছর মেয়াদি এ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। পরিকল্পনা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন না কমিয়েই আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মধ্যে স্থানীয়ভাবে ১০ লাখ টন তেল উৎপাদন করা হবে, যা চাহিদার শতকরা ৪০ ভাগ। এর ফলে তেল আমদানিতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব হবে।’

এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথমটি হচ্ছে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। বর্তমানে আবাদকৃত টরি-৭, মাঘী, ডুপিসহ স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উচ্চফলনশীল সরিষার জাত বিনা-৪, ৯, বারি ১৪, ১৭ প্রভৃতি জাত কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, উপকূলের লবণাক্ত, অনাবাদি চরাঞ্চল, হাওর ও পাহাড়ি অঞ্চলকে তেলজাতীয় ফসল চাষের আওতায় আনা। তৃতীয়ত, নতুন শস্যবিন্যাসে স্বল্প জীবনকালের ধানের চাষ করে রোপা আমন ও বোরোর মধ্যবর্তী সময়ে অতিরিক্ত ফসল হিসেবে সরিষার চাষ করা। এ বিন্যাসে প্রায় ৫ লাখ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।’

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘তেলজাতীয় ফসল উৎপাদনের মূল সমস্যা হলো ধানসহ অন্যান্য ফসলের তুলনায় কম লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা তা চাষ করতে চায় না। আমরা তাই ধানের উৎপাদন কমাতে চাই না। সেজন্য আমরা তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। আর এটি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা যাবে। ইতোমধ্যে কর্মপরিকল্পনা করে পেঁয়াজ উৎপাদনে আমরা সফল হয়েছি। আমদানি নির্ভরতা অনেক কমিয়ে আনা গেছে। পেঁয়াজের মতো ভোজ্যতেলের উৎপাদনেও আমরা সফল হব।’

সভায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিভিন্ন সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

এই বিভাগের আরও খবর