শিশুকালে সুস্থ থাকলেও কৈশোরে এসে হঠাৎ মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে জয়া ঘোষ (২২)। প্রতিবেশীদের নানা অভিযোগের মুখে বাধ্য হয়ে জয়াকে পাঁচ বছর ধরে শিকলে বেঁধে রাখেন মা।
জয়া মৌলভীবাজার সদর উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়নের শ্রীমঙ্গল গ্রামের মৃত হরি ঘোষের মেয়ে। অভাবের সংসারে মা রেবা ঘোষ (৬৫) অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে মেয়ের খাবার জোটান। টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, কৈশোরে পা রাখতেই জয়ার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। বাবা বেঁচে থাকতে কিছু চিকিৎসা করিয়েছিলেন। তখন অনেকটা উন্নতি হলে এক বাকপ্রতিবন্ধীর সঙ্গে জয়ার বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পর আবারও সমস্যা দেখা দিলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন জয়াকে বাবা-মার কাছে পাঠিয়ে দেন। এর কিছুদিন পর জয়ার বাবা মারা যান। এরপর আর টাকার অভাবে মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারেননি মা। আজ পর্যন্ত জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি কোনো সহযোগিতাও। এদিকে, জয়ার বড় ভাই অনুকুল ঘোষও (৪০) গত সাত বছর ধরে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েছেন।
জয়ার মা রেবা ঘোষ লাজ-শরমের ভয়ে কারও কাছে হাত পাতি না। অভাব আমাকে চেপে ধরেছে। এখন নিজের চলতেই কষ্ট হয়। তার ওপর আবার নিজের দুটি সন্তানই মানসিক ভারসাম্যহীন। এজন্য মানুষের বাড়িতে কাজ করছি। আজ পর্যন্ত কারও কাছ থেকেই কোনো সাহায্য পাইনি।
জয়ার ভাবি অনুকুল ঘোষের স্ত্রী শুকতা ঘোষ বলেন স্বামী অনুকুলকে নিয়ে কষ্টে আছি। দিনে সংসারের কাজকর্ম করে আবার সারারাত না ঘুমিয়ে স্বামীকে পাহারা দিতে হয়। আমাদের দুটি সন্তান। বাবা অসুস্থ থাকায় ছেলেটা পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে, আর মেয়েটা এখনো স্কুলে যাচ্ছে। পরিবারে দুজন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষ থাকায় ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, তা নিয়ে চিন্তায় আছি।
ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দরজাবিহীন একটি ঘরে জয়াকে শিকলে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ঘরের মেঝেতে চটের বস্তা, পুরাতন একটি কাঁথা ও মশারি টাঙানো। ঘরের ভেতর অন্ধকার। নেই কোনো বৈদ্যুতিক পাখা ও বাতি। একসময় দূরন্ত শৈশবে সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলা আর চারদিক ঘুরে বেড়ানো জয়া বছরের পর বছর শিকলবন্দি হয়ে বদ্ধ ঘরে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাচ্ছে।
মৌলভীবাজার সদর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুমন দেবনাথের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা তার একটি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করবো। চিকিৎসার প্রয়োজন হলে সদর হাসপাতাল বা সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সেটারও ব্যবস্থা করবো।
শ্রীমঙ্গল উপজেলার গিয়াসনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোশাররফ টিটু বলেন, আমি মেয়েটির বিষয়ে কিছুই জানতাম না। এখন যেহেতু জানলাম আমি তার জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার ব্যবস্থা করবো।