মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৩ অপরাহ্ন

অগ্নিপ্রতিরোধে পদ্মা সেতুতে থাকছে অত্যাধুনিক ব্যবস্থা

  • প্রকাশিত : রবিবার, ১২ জুন, ২০২২

পদ্মা বহুমুখী সেতুর ভেতর, দুপ্রান্তে এবং রেললিংকের ভায়াডাক্টেও (উড়ালপথ) থাকছে বিশ্বমানের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেতু, সেতুর দুপ্রান্ত এবং রেললিংকের ২১ কিলোমিটার উড়ালপথে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা, প্রবেশপথ, কোন পদ্ধতিতে আগুন নেভানো হবে-সবই থাকছে প্রকল্প দুটিতে। পাশাপাশি অগ্নিপ্রতিরোধ সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য থাকবে উন্মুক্ত। সেতুর দুপাশে নিজস্ব অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশনসহ উভয় পাশের দুটি রেলওয়ে স্টেশনেও বিশেষ ফায়ার স্টেশন থাকছে। ২১ কিলোমিটার উড়াল রেলপথের প্রতি কিলোমিটারে থাকছে দুটি করে বিশেষ সিঁড়ি।

পদ্মা বহুমুখী সেতু এবং পদ্মা রেললিংক প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য পদ্মা সেতুর দুপাশে দুটি অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন নির্মাণ হচ্ছে। ওই দুটি স্টেশন থেকে পুরো পদ্মা সেতুতে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে। সেতুতে ওঠা ও নামার পথ রেখে তৈরি হচ্ছে স্টেশন দুটি। কোনো কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে মুহূর্তেই দুপাশ থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ছুটে যাবেন। অগ্নিনির্বাপণে স্টেশন দুটিতে থাকবে বিশেষ ধরনের যন্ত্রাংশ। থাকবে গাড়িও। গাড়িতে রিজার্ভ পানি ছাড়াও পদ্মার পানি সরাসরি উঠিয়েও অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকছে।

সেতুর নিজস্ব ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে সেতুর দুপাশে মাওয়া ও পদ্মা রেলওয়ে স্টেশনেও থাকছে মিনি ফায়ার স্টেশন। সেতুর নিচ দিয়ে যাচ্ছে রেলপথ। যে পথ দিয়ে প্রতিদিন অন্তত ১৮ জোড়া (৩৬) ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সেতুতে চলন্ত অবস্থায় ট্রেনে আগুন লাগলে মাওয়া ও পদ্মা রেলওয়ে স্টেশন থেকেও অগ্নিনির্বাপণে বিশেষ ট্রলি থাকবে। তাছাড়া সেতুর দুপাশ থেকে সংযুক্ত উড়াল রেলপথ পুরোটাই অগ্নিনির্বাপণের আওতায় থাকছে।

পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, পদ্মা সেতুর দুপাশে দুটি অত্যাধুনিক ফায়ার স্টেশন হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই স্টেশন দুটির কাজও সমাপ্ত হচ্ছে। বিশ্বমানের ইকুইপমেন্ট থাকছে স্টেশন দুটিতে। পুরাতন মডেলের কোনো যন্ত্রপাতিই ওখানে থাকেব না। আমরা ইতোমধ্যে দুটি ফায়ার স্টেশন করে দিয়েছি। লোকবলও নিশ্চিত করা হচ্ছে। এখন দ্রুত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টরা ইকুইপমেন্ট কিনবে। স্টেশন সড়কের সঙ্গে সেতুতে ওঠানামার যে পথ-সেই পথের সঙ্গে ফায়ার স্টেশনের পথ সংযুক্ত রয়েছে।

শফিকুল ইসলাম জানান, পুরো সেতু এবং সেতুর দুপাশ অগ্নিপ্রতিরোধে শুধু সেতুর নিজস্ব দুটি ফায়ার স্টেশন থেকে নয়, আশপাশের জেলা-উপজেলায় থাকা ফায়ার স্টেশনগুলো যুক্ত থাকবে। যে কোনো পরিস্থিতিতে সবকটি ফায়ার স্টেশন একযোগে কাজ করবে। সেতুতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে মুহূর্তেই পৌঁছে যাবে অগ্নিনির্বাপণের গাড়ি ও ফাইটাররা। স্টেশনগুলোতে এমন কিছু অত্যাধুনিক ইকুইপমেন্ট থাকবে-যা দিয়ে খুব সহজেই অগ্নিপ্রতিরোধ-নির্বাপণ করা যাবে। নদী থেকে সরাসরি পানি উঠিয়ে আগুন নেভানোর ব্যবস্থাও থাকবে। অর্থাৎ পদ্মা সেতুতে অগ্নিপ্রতিরোধ-নির্বাপণে সর্বোচ্চ প্রযুক্তি স্থাপন নিশ্চিত করা হচ্ছে।

পদ্মা সেতু রেললিংক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন জানান, ঢাকা থেকে যশোর পযর্ন্ত এ প্রকল্পের দৈর্ঘ্য ১৭২ কিলোমিটার। এর মধ্যে পদ্মা বহুমুখী সেতুর দুপাশে প্রায় ২১ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল রেলপথ) হচ্ছে। সেতুর দুপাশে মাওয়া ও পদ্মা সেতু রেলওয়ে স্টেশন নির্মিত হচ্ছে বিশেষ প্রযুক্তির মাধ্যমে। এ দুটি স্টেশনে মিনি ফায়ার স্টেশন থাকছে। থাকবে বিশেষ ধরনের ট্রলি। এছাড়া ভাঙ্গায় নির্মিত হচ্ছে দেশের সবচেয়ে বড় এবং অত্যাধুনিক রেলওয়ে জংশন। এ জংশনে পানি জমিয়ে রাখার জন্য স্টেশন চত্বরজুড়ে মাটির নিচে বিশেষ পানির হাউজ করা হচ্ছে।

প্রকৌশলী মো. আফজাল হোসেন বলেন, পদ্মা সেতু ও পদ্মা রেল লিংক প্রকল্প দুটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল প্রকল্প। পদ্মা রেললিংক প্রকল্পে ব্যয় হবে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। যা পদ্মা সেতু ব্যয়ের চেয়ে বেশি। সেতুর দুপাশে ২১ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ হচ্ছে। এ পথে অগ্নিপ্রতিরোধের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতি ১ কিলোমিটার উড়ালপথের দুপাশে বিশেষ ধরনের সিঁড়ি রাখা হচ্ছে। যে সিঁড়ি দিয়ে জরুরি মুহূর্তে সাধারণ ট্রেনযাত্রী খুব সহজে নামতে পারবে- অগ্নিনির্বাপক কর্মীরাও দ্রুত সময়ের মধ্যে ওপরে উঠতে পারবে। ট্রেন এবং স্টেশনগুলোতে অগ্নিপ্রতিরোধ ব্যবস্থা-নিরাপত্তায় সব ধরনের তথ্যভান্ডার উন্মুক্ত রাখা হবে-যাতে সাধারণ যাত্রীরাও সচেতন হোন। সিঁড়িগুলো এমনভাবে করা হচ্ছে-যাতে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরাও অগ্নিনির্বাপণে যুক্ত হতে পারেন। সেতুর নিচ দিয়ে ট্রেন চলাচল করবে। সেতুর ভেতরে থাকা রেললাইনের পাশ ঘেঁষেই গ্যাসলাইন তথা গুরুত্বপূর্ণ পাইপ রয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকব। সেতু দিয়ে নির্ধারিত গতি নিয়ে সবকটি ট্রেন চলবে।

এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরী জানান, ঢাকা-যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথে অত্যাধুনিক ট্রেন চলাচল করবে। ইতোমধ্যে এ পথের জন্য আধুনিক যাত্রীবাহী কোচ-ইঞ্জিন সংগ্রহ করা শুরু হয়েছে। প্রতিটি ইঞ্জিন-কোচে অগ্নিপ্রতিরোধ-নির্বাপণে বিশেষ ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। যেহেতু এ পথে প্রায় ২১ কিলোমিটার উড়াল রেলপথ রয়েছে, সেক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রেখেই সব ধরনের ট্রেন চালানো হবে। ট্রেনের ভেতরে থাকা রেলওয়েম্যানদের অত্যাধুনিক কোচ-ইঞ্জিন সম্পর্কে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার সাহাদাত আলী জানান, এ রেলপথ পাথরের স্লিপার দিয়ে করা হচ্ছে। অন্য সব লাইনের চেয়ে এ পথে ট্রেনে গতি হবে বেশি। আমরা যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যা যা প্রয়োজন তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে শেয়ার করছি। প্রতিটি কোচে একাধিক সিলিন্ডার অগ্নিনির্বাপণ বোতল থাকবে।

সূত্র: যুগান্তর

এই বিভাগের আরও খবর