সোমবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী প্রতিরোধী ডিভাইস আবিষ্কার

শোয়েব হোসেন
  • প্রকাশিত : রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০২২

যাত্রীবাহী নৌ-যানগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী প্রতিরোধী ডিভাইস আবিষ্কার করেছে ভোলার ক্ষুদে বিজ্ঞানী মাহির আশহাব লাবিব।বৃহঃবার সকাল ১০ ঘটিকার সময় সরকারি আবদুল জব্বার কলেজ এর একটি কক্ষে ডিজিটালাইজড বি আই ডব্লিও টি এ (‘Digitalized BIWTA , A Life protective device for passenger vessel ’। ) নামক এ যন্ত্রটির প্রদর্শনী করা হয়েছে ।

কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের বেশ কিছু শিক্ষার্থীর আগ্রহের কারণে অধ্যক্ষের নির্দেশনায় এ প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় বলে জানা যায়। মাহির আশহাব লাবিব এ কলেজেরই একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের একজন কৃতি শিক্ষার্থী।

তাঁর উদ্ভাবিত ডিভাইসের কার্যকারীতা বর্ণনা করতে গিয়ে এ খুদে বিজ্ঞানী বলেন, এটি এমন একটি যন্ত্র যা যাত্রীবাহী লঞ্চের ভেতরে প্রবেশ পথ ও নির্গমন পথে লাগানো থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে লঞ্চের ভিতরে প্রবেশকারি যাত্রী ও একইসাথে লঞ্চ থেকে বের হওয়া যাত্রীর সংখ্যা আলাদাভাবে ডিসপ্লেতে দেখাতে থকে। যদি মোট যাত্রী সংখ্যা উক্ত নৌ-যানে BIWTA কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ যাত্রী ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশী হয় তবে তা সনাক্ত করে তৎক্ষণাৎ উচ্চশব্দে সাইরেন বাজিয়ে নৌ-যানে অবস্থানরত যাত্রী, নৌ-যানের চালক এবং নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ তথা BIWTA এর কর্মকর্তাদেরকে সতর্ক করবে। যতক্ষন পর্যন্ত যাত্রীধারন ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নৌযানের অভ্যন্তরে থাকবে ততক্ষণ সাইরেন বাজতে থাকবে। যাত্রী সংখ্যা নির্ধারিত মাত্রার নিচে আসলে কেবল তখনই সাইরেন বন্ধ হবে।

নৌ-দুর্ঘটনার পরিসংখ্যন তুলে ধরে এ খুদে বিজ্ঞানী বলেন, বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এর ওয়েবসাইট থেকে বিগত ৬ বছরে দেশে ঘটে যাওয়া নৌ- দুর্ঘটনাগুলোর তথ্য-উপাত্ত লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ২০১৬- ২০১৮ সাল পর্যন্ত বছরে গড়ে প্রায় ৪২৫টি দুর্ঘটনা ঘটলেও ২০১৯ সালে তা প্রায় দ্বিগুন হয়ে যায়। ২০২০ সালে অর্ধেকে নামে আসলেও ২০২১ সালে আবার বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবনতা দেখা যায়। ঘটে যাওয়া লঞ্চ দুর্ঘটনাগুলোর অনেক কারণ থালেও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত থেকে জানা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুল কারণ ছিল ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবহন।

এই দুর্ঘটনাগুলোতে কয়েক হাজার মানুষ নিহত বা আহত হয়েছে, হয়েছে সম্পধানী । অথচ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল আইন ২০১৯ এর ৬৬ ধারায় অতিরিক্ত যাত্রীবহন করাকে বেআইনি ঘোষনা করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

ডিভাইসটির নাম Digitalized BIWTA রাখা হলো কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে এই খুদে বিজ্ঞানী জানান,“মূলত যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ BIWTA কে Digitalized করাই আমার উদ্দেশ্য”।

এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত্ব বিশ্লেষণ করে দেখা যায় মুলত ডেকে ভ্রমণকারীসহ অধিকাংশ যাত্রী লঞ্চে উঠার পর টিকিট করে। আবার নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা B I W T A এর জরিপ সনদপত্রে দিনের বেলা যাত্রী পরিবহন ও রাতের বেলা যাত্রী পতিবহনে যাত্রী ধারণ ক্ষমতায় ভিন্নতা থাকে। তাই লঞ্চ যাত্রীদের প্রকৃত সংখ্যা মালিক পক্ষই শুধু জানে। নিয়ন্ত্রণকারি কতৃপক্ষ হলেও বি আই ডব্লিও টি এ (B I W T A) এর কাছে এ বিষয়ে সঠিক কোনো তথ্য থাকে না। যার ফলে যাত্রীবাহি লঞ্চ চলাচললে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবহন থেকে লঞ্চ ব্যবসায়ীদেরকে বিরত রাখা প্রায় দুস্কর হয়ে উঠেছে। এই সমস্যা সমাধানে প্রথমেই নিয়ন্ত্রণকারি সংস্থা B I W T A-কে যুগোপযোগী ও Digitalized করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই খুদে বিজ্ঞানী। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনা করেই তিনি ‘Digitalized BIWTA , A Life protective device for passenger vessel’ নামক Digital Device তৈরি করেছেন বলে জানান । তিনি দৃড়তার সাথে বলেন, যদি স্বদিচ্ছা থাকে তবে এ যন্ত্রটির মাধমে কার্যকরভাবে যাত্রীবাহী লঞ্চগুলোতে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।

ডিভাইসটি নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি নবলেন, বর্তমানে ডিভাইসটিতে GPS যুক্ত করে Internet Server এর সাতে সংযুক্ত করার কাজ চলমান আছে। । এর পর BIWTAএর অনুমতি সাপেক্ষে ডিভাইসটিকে BIWTA-এর সার্ভার এর সাথে যুক্ত করে দেওয়া গেলে, BIWTA প্রতিটি নৌ-যানের Real Time যাত্রী সংখ্যা তাদের অফিসে বসেই পর্যবেক্ষণ করতে পারবে এবং নৌযানটি অন্য কোনো ঘাট থেকে আতিরিক্তযাত্রী নিচ্ছে কিনা তাও পর্যবেক্ষন করতে পারবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে। এর ফলে অন্তত এই একটি কারণে নৌ-দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে তিনি মনে করেন।

উল্লেখ্য যে, এর আগে দশম শ্রেণির ছত্র থাকা অবস্থায় ‘স্মার্ট গ্যাস লিকেজ ডিটেক্টর’ নামক ডিভাইস আবিষ্কার করে আইসিটি খাতে অনন্য আবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ বেসরকারি সাধারণ ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ট ব্যক্তি হিসেবে ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার-২০২১ লাভ করার গৌরব অর্জন করেন এ খুদে বিজ্ঞানী। এছাড়া এ বছর বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতায় (২০২২) এ তাঁর নিজের আবিষ্কৃত ‘ফায়ার ফাইটার রোবট’’ প্রদর্শন করে উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়ে জাতীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন এ খুদে বিজ্ঞানী। এ বছর জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হওয়ার গৌরবসহ তাঁর ঝুলিতে আছে আসংখ অর্জন। তাঁর এ অর্জনে তাঁর বাবা মায়েরসাথে খুশি তাঁর সহপাঠি বন্ধু এবং শিক্ষক- শিক্ষিকামন্ডলী। এই কৃতি শিক্ষার্থী ও খুদে বিজ্ঞানী মাহির আশহাব লাবিব এ কলেজেরই কৃশিশিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক এ, এইচ, এম, মোস্তফা কামাল এর একমাত্র পুত্র। তাঁর মা ইয়াছমীন আক্তার একজন গৃহিনী।
তাঁর এ আবিষ্কারে খুশি কলেজের আধ্যক্ষ( ভারপ্রাপ্ত) মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, “আত্যন্ত মেধবী এবং বিনয়ী এ কৃতি শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান বিষয়ক আবিষ্কার ও অর্জনে আমরা খুশি। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সকল ধরণের সহায়তা দিচ্ছি এবং ভবিষ্যতেও দিয়ে যাব”।

এই বিভাগের আরও খবর