রাজধানীর রামপুরার ডিআইটি রোডের হাজিপাড়ার বাসা থেকে সিআইডি পরিচয়ে তুলে নেওয়া তরুণ চিকিৎসক শাকির বিন ওয়ালির খোঁজ মেলেনি চার দিনেও। মালিবাগ সিআইডির প্রধান কার্যালয় থেকে শুরু করে থানাপুলিশ কেউ সন্ধান দিতে পারেনি শাকিরের। তাকে আটক কিংবা গ্রেপ্তারের বিষয়টি স্বীকারও করেনি আইন প্রয়োগকারী কোনো সংস্থা। শাকিরের বাবা চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. একেএম ওয়ালি উল্লাহের অভিযোগ, বারবার থানায় গেলেও তার অভিযোগ কিংবা জিডি নেওয়া হয়নি। গত রবিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে শাকিরকে তুলে নেওয়া হয় বলে জানান তিনি।
ঘটনার চার দিন পার হয়ে গেলেও একমাত্র ছেলের কোনো সন্ধান না পেয়ে উদ্বিগ্ন বাবা বলেন, সিআইডি পরিচয়ে সিভিল পোশাকে চার ব্যক্তি আমার বাসায় প্রবেশ করে। তখন তিনি পেশাগত কাজে বাইরে ছিলেন। বাসায় তার স্ত্রী, মেয়ে ও ছেলে ছিল। সিআইডির পরিচয় দেওয়া চার ব্যক্তি তার সদ্য এমবিবিএস পাস করা ছেলে ডা. শাকির বিন ওয়ালিকে বাসা থেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার নামে নিয়ে যায়। তাদের নাম, পরিচয় ও ফোন নম্বর জানতে চাইলে তারা শুধু বলে, আমরা সিআইডির লোক। খবর পেয়ে তিনি রামপুরা থানায় যোগাযোগ করেন। জিডি করতে চাইলে রামপুরা থানার (তদন্ত) গোলাম মাওলা আমার কাছ থেকে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলো ওনার ব্যক্তিগত ডায়েরিতে নোট করে বলেন, ঘটনার খোঁজখবর নিয়ে পরে জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, রবিবার শাকিরকে নিয়ে যাওয়ার পর রাত ১০টার দিকে আরও চার-পাঁচজনের একটি দল বাসায় আসে, নিজেদের সিআইডির লোক পরিচয় দিয়ে রুম তল্লাশি করে একটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। তাদের নাম, পরিচয় জানতে চাইলে শুধু বলে, আমরা সিআইডির লোক।
শাকিরের বাবা আরও জানান, ১২ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তিনি সিআইডির মালিবাগ অফিসে যান এবং সেখানে রিসিপশনে যোগাযোগ করেন। তবে তারা শাকির বিন ওয়ালির ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে অপারগতা প্রকাশ করে।
শাকিরের রাজনৈতিক মতাদর্শের ব্যাপারে তিনি বলেন, শাকির কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজে পড়ার সময়ে রেটিনা কোচিং সেন্টারে পড়াতেন। সেখান থেকে পাস করে চলে আসার পর কোনো কিছুর সঙ্গে যুক্ত নয়। সামনে এফসিপিএস পরীক্ষা থাকায় পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকত সে।
বারবার অভিযোগ জানাতে গেলেও থানায় অভিযোগ নেয়নি উল্লেখ করে ডা. ওয়ালি উল্লাহ বলেন, ১১ তারিখ থেকে একাধিকবার থানায় গিয়েছি। কিন্তু তারা কিছু জানাতে পারেনি। আমার অভিযোগ কিংবা সাধারণ ডায়েরিও রাখা হয়নি।
অভিযোগ ও জিডি না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, ডা. শাকির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার হাতে আটক হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন। তিনি আরও জানতে পেরেছেন, তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) প্রধান অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ আলী মিয়া বলেছেন, বিষয়টি সম্পর্কে তিনি ‘অবগত নন’। এটা হওয়ার কথা নয়, সিআইডি কোনো অপারেশন করতে গেলে জানিয়ে যাওয়ার কথা।
চিকিৎসক ওয়ালি উল্লাহ জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে পূর্ব হাজীপাড়ার ৬৮/এ নম্বর বাসায় তিনি স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে বসবাস করছেন। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে তিনি চার বছর সৌদি আরবে ছিলেন। সেখান থেকে ফিরে ১৯৯৫ সালে রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়া এলাকায় চক্ষু বিশেষজ্ঞ হিসেবে প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ের মধ্যে শাকির দ্বিতীয়। ওয়ালি উল্লাহ বলেন, তার ছেলে যদি কোনো অন্যায় কাজ করেন, প্রচলিত আইনে তার বিচার হোক। তাকে যেন গুম করে না রাখা হয়।