ঢাকা প্রেস ক্লাব সাংবাদিকদের রুটি রুজির অধিকার নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। হাটি হাটি পা পা করে এগিয়ে চলেছে ঢাকা প্রেসক্লাবের কার্যক্রম। একঝাক চৌকস কার্যকরী সদস্যদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এ সংগঠনটি আজ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে সংগঠনের ২০২২-২০২৩ সাধারণ সভা ও সদস্যদের মাঝে আাইডিকার্ড বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক নাসিম। এ সময় তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল ও সরকার একযোগে সাংবাদিকদের মধ্যে সেতু বন্ধন হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রেস কাউন্সিল সাংবাদিকদের সমস্যাগুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছে প্রতিকারের জন্য এবং সরকারের বক্তব্য ও সাংবাদিকদের নিকট পৌঁছানো হয়। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের জন্য আইন সংস্কারের জন্য কমিটির সুপারিশ করা হয় তার দায়িত্ব গ্রহণের পূর্বেই। সুপারিশ নামায় সাংবাদিক নেতারা সমর্থন ও স্বাক্ষর করেন। সেই আলোকে কাজ চলছে। বর্তমানের রিপোর্ট অনুমোদনের জাতীয় সংসদে পাঠানো হয়েছে।
প্রেস কাউন্সিলের প্রত্যাশা সাংবাদিকগণ গ্রাজুয়েট হবেন অথবা ৫ বছর সাংবাদিক পেশায় কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। প্রেস কাউন্সিল সারা দেশের সাংবাদিকদের জন্য ডাটাবেজ তৈরি করবে যেখানে কর্মরত সাংবাদিকদের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। ফলে সারাদেশে সাংবাদিক পরিচয়ে কোন ধরণের অপরাধ অথবা সাধারণ মানুষকে হয়রানী করার সুযোগ পাবে না, কারণ ডাটাবেজ খুললেই ঐ সকল সাংবাদিক পরিচয় দানকারী আদৌ সাংবাদিক কিনা তা জানা যাবে। বর্তমানে মিথ্যা নিউজ করলে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে। সাংবাদিকদের ভয়ের কোন কারণ নেই। প্রেস কাউন্সিল ১৪ জন সদস্য দ্বারা গঠিত, তার মধ্যে ৯জনই সাংবাদিক সদস্য।
তিনি আরো বলেন, প্রেস কাউন্সিল এ অভিযোগ প্রতিকার এর জন্য ৩ সদস্য বিশিষ্ট বিচারিক প্যানেল তৈরি করা হয়। তাতে প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান ও দুই জন সাংবাদিস সদস্য থাকেন।
ডিজিটাল আইন নিয়ে সাংবাদিকদের ভয়ের কোন কারণ নেই, নিয়ম মেনে সঠিক মতো দায়িত্ব পালন করলে তার কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। ১৯৭৪ সালে জাতরি জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম প্রেস কাউন্সিল গঠন করেন যেখানে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তিরস্কার এর বিধার রেখে (৪৮) বছর পূর্বের। ভারতের প্রেস কাউন্সিল গঠিত হয় ১৯৭৮ সালে এর ও পরে নেপালের প্রেস কাউন্সিল গঠিত হয়। ভারতের প্রেস কাউন্সিল বাংলাদেশের প্রেস কাউন্সিলকে অনুসরণ করে আইন গঠন করা হয়।
ঢাকা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন বাচ্চু বলেণ, বাংলাদেশ সরকারের অন্যান্য বাহিনীর মৃত্যু বরণ ও দুর্ঘটনায় আহত বা নিহত হলে রাষ্ট্র তাদের পাশে থাকেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় কোন সাংবাদিক দুর্ঘটনা ও নিহত হলে সরকার কিংবা পত্রিকার মালিক কাউকেই পাশে থাকতে দেখা যায় না। সরকারি কোন কর্মচারী অসুস্থ হলে তাদের নিজস্ব সরকারি কর্মচারী হাসপালে চিকিৎসার যাবতীয় পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ঔষধ ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয় কিন্তু এ সুযোগ সাংবাদিকদের জন্য নেই। সরকারী হাসপাতালে সাংবাদিকদের জন্য কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। এই জন্য তিনি জোর দাবী করেন, যেন সকল সাংবাদিকদের জন্য ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব বিশিষ্ট সাংবাদিক কলামিষ্ট নুরুল আমিন রোকন। তিনি বলেন, আমরা চাই হলুদ সাংবাদিকতা বন্ধে আইন করা হোক। তিনি দাবী করেন, বৃটিশ আমলে গুপ্তচর আইনে অপব্যবহার করে সরকারী কিছু আমলা তথ্য সংগ্রহে বাধা সৃষ্টি করে সম্প্রতি প্রথম আলোর একজন সিনিয়র সাংবাদিককে গুপ্তচর আইনে গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়। এছাড়াও ঢাকা প্রেসক্লাবের সম্পাদকের বক্তব্যর সাথে একাত্বতা প্রকাশ করে বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল চেয়ারম্যান এর নিকট তা তুলে ধরেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকা প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক রফিকউল্লাহ সিকদার বলেন, প্রেস কাউন্সিল ও সরকার শুধু পত্রিকার মালিক ও সংগঠন এর সাথে আলোচনা বৈঠক করলেই হবে না, সাংবাদিক সংগঠগুলোর সাথেও আলোচনাও করতে হবে।
ঢাকা প্রেসক্লাবে সভাপতি মোঃ শাহজাহান মিয়ার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মোসলেহ উদ্দিন বাচ্চুর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা প্রেসক্লাবে উপদেষ্টা উবায়দুল হক খান, লায়ন এম্ এইচ মারূফ সিকদার, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের নির্বাহী সদস্য জাকির হোসেন সহ ঢাকা প্রেসক্লাবের কার্যকরী সম্পাদক এম এইচ মাহফুজ, দপ্তর সম্পাদক এড. আলাউদ্দিন, সদস্য এম এ গণি, বিপ্লব পাল, মোঃ নজরুল ইসলাম, মোঃ জয়নাল আবেদীণ ফরাজীসহ প্রমুখ। পরে ঢাকা প্রেসক্লাবের সাধারণ সদস্যদের মাঝে ঢাকা প্রেসক্লাবে কার্য নির্বাহী পরিষদের ২০২২-২০২৩ সনের আয়-ব্যয় ও কর্ম পরিকল্পনা উপস্থান করেন। পরে নৈশ ভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তী ঘোষণা করা হয়।