ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন। রাজধানী হওয়ায় এখানে ট্রেনের টিকিটের চাহিদাও বেশ। এই সুযোগে টিকিট কালোবাজারিরাও সক্রিয়। তাদের একটি চক্র রয়েছে। এই চক্রের সদস্যরা রেলস্টেশনে লাইনে দাঁড়িয়ে এক একটি এনআইডি দিয়ে চারটি করে টিকিট সংগ্রহ করে। কখনো রিকশাওয়ালা, কুলি, দিনমজুরকে এনে দাঁড় করায় লাইনে। তাদের মাধ্যমে টিকিট সংগ্রহ করা হয়। বিনিময়ে সামান্য কিছু টাকা দেওয়া হয়। এরপর এসব টিকিট বিক্রি করা হয় দিগুণ দামে।
শুধু রেলস্টেশনে নয়, ফেসবুকে গ্রুপ খুলেও টিকিট বিক্রি করা হয়। আর এই চক্রটির সঙ্গে রেলস্টেশনের অসাধু কর্মকর্তারা জড়িত থাকতে পারেন বলে জানায় র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর টিকাটুলিতে র্যাব কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য দেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের মূলহোতা মো. সেলিম (৪৮) এবং তার সদস্য মো. শাহ আলম (৩৪), মো. লিটন (৩৫), মো. আ. রশিদ ফকির (৩০) ও খোকন মিয়াকে (৫৮) গ্রেফতার করা হয়।
এসময় তাদের কাছ থেকে ৮৮টি ট্রেনের টিকিট, চারটি মোবাইল এবং ১৮ হাজার ৪৪৭ টাকা উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, এই চক্রটি কমলাপুর এবং বিমানবন্দরসহ সারাদেশের বিভিন্ন রেলস্টেশনে কালোবাজারির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করে আসছিল।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে কালোবাজারে তাদের টিকিটের দাম ততো বাড়তে থাকে। সাধারণত দিগুণ মূল্যে টিকিট বিক্রি করে তারা। সুযোগ বুঝে কখনো আরও দাম বাড়িয়ে দেয়।
এগারো সিন্দুর প্রভাতী, মহানগর প্রভাতী, চট্টলা এক্সপ্রেস, জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এসব ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি করে থাকে চক্রটি। এই চক্রের আরও ইউনিট রয়েছে। প্রতি ইউনিটে রয়েছে ৫-৭ জন করে সক্রিয় সদস্য।
র্যাব গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা জানান, সাত বছর ধরে চক্রের মূলহোতা সেলিমের নেতৃত্বে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকায় কালোবাজারিতে ট্রেনের টিকিট বিক্রি করে আসছেন তারা। এভাবেই অবৈধ পন্থায় জীবিকা নির্বাহ এবং যাবতীয় খরচ চালিয়ে আসছিলেন।
র্যাব বলছে, রেলস্টেশনে যে পরিমাণ টিকিট বরাদ্দ থাকে তার মধ্যে ৫০ শতাংশ বিক্রি হয় অনলাইনে। ফলে কাউন্টারে এসে অনেকে টিকিট না পেয়ে ফিরে যান। আর এই সুযোগটাই গ্রহণ করেন টিকিট কালোবাজারি চক্রের সদস্যরা।
এই চক্রটি স্টেশন ছাড়াও অনলাইনে বিভিন্ন জনের এনআইডি ব্যবহার করে টিকিট সংগ্রহ করে। এরপর এসব টিকিট নিয়ে রেলস্টেশনের ভেতরে ছড়িয়ে পড়েন তারা। তাদের টার্গেটে থাকেন স্টেশনে এসে টিকিট না পাওয়া যাত্রীরা।
ট্রেন ছাড়ার ঘণ্টা দুয়েক আগে যাত্রী সমাগম শুরু হলে তাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এই সুযোগে দিগুণ দামে টিকিট বিক্রি করে। এটা তাদের স্বাভাবিক সময়ের কার্যক্রম।
র্যাব বলছে, ঈদের সময় তাদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যায় সবচেয়ে বেশি। এসময় তারা এক একটি টিকিট ৩-৪ গুন বেশি দামে বিক্রি করে।
গত কোরবানির ঈদে ৫০০ টাকার টিকিট সর্বোচ্চ ২০০০ টাকায়ও চক্রটি বিক্রি করেছে বলে জানান র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
র্যাব-৩ এর অধিনায়ক জানান, চক্রের মূলহোতা সেলিমের নামে টিকিট কালোবাজারির দায়ে মোট সাতটি মামলা রয়েছে। এরইমধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে জেলও খেটেছেন তিনি। এছাড়া অপর আসামিদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বেশ কয়েকটি মামলা।