ফুটবলে সর্বোচ্চ পাঁচবার বিশ্বকাপ জিতেছে ব্রাজিল, যা আর কোনো দলই করতে পারেনি। সুতরাং এই খেলায় সেলেকাওদের অবিসংবাদিত নেতা বললে হয়তো ভুল হবে না। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না, এই ব্রাজিলকেই একসময় শাসন করেছে ফুটবলের আরেক বড় শক্তি পর্তুগাল। প্রায় ৩০০ বছর পর্তুগিজ উপনিবেশ ছিল ব্রাজিল। ফলে তার কিছু প্রভাব আজও রয়ে গেছে ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে। যেমন- এখনো দেশটির অধিকাংশ মানুষ কথা বলেন পর্তুগিজ ভাষায়।
উইকিপিডিয়ার তথ্যমতে, ষোড়শ শতাব্দী থেকে ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমভাগ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ বছর পর্তুর্গিজ সাম্রাজ্যের উপনিবেশ ছিল ব্রাজিল। ১৮২২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর পর্তুগালের শাসন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে তারা। তবে এরপর থেকে সেটি ছিল ব্রাজিলিয়ান সাম্রাজ্য। ১৮৮৯ সালে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রথম ব্রাজিলিয়ান প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।
ব্রিটানিকার তথ্য বলছে, বর্তমানে ব্রাজিলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রথম ভাষা হচ্ছে পর্তুগিজ। তবে বিভিন্ন বিদেশি ভাষার প্রচলনও দেখা যায় সেখানে।
সময়ের পরিক্রমায় পর্তুগাল-ব্রাজিল উভয় দেশেই পর্তুগিজ ভাষায় ব্যাপক রূপান্তর এসেছে। দুটি দেশই তাদের বানানগুলোকে অনেকাংশে প্রমিত করেছে। কিন্তু উচ্চারণ, শব্দভাণ্ডার ও শব্দের অর্থ এতটাই পরিবর্তিত হয়েছে যে, ব্রাজিলে অনেকের কাছেই পর্তুগালের চলচ্চিত্রের তুলনায় লাতিন আমেরিকার অন্যান্য দেশের স্প্যানিশ ভাষার চলচ্চিত্র বোঝা সহজ হতে পারে।
এছাড়া ইতালীয়, জার্মান, জাপানি এবং স্প্যানিশ-ভাষী অভিবাসীরা ব্রাজিলিয়ান পর্তুগিজ ভাষায় নতুন নতুন শব্দ ও অভিব্যক্তি যোগ করেছেন। যেমন ‘চাউ’ (বিদায়), শব্দটি গৃহীত হয়েছে ইতালীয় ‘সিয়াও’ শব্দ থেকে। বিদেশী পণ্য ও প্রযুক্তির হাত ধরেও বেশ কিছু নতুন শব্দ যোগ হয়েছে।
পর্তুগিজ থেকে বাংলা ভাষায় গৃহীত শব্দের সংখ্যাও কিন্তু নেতাৎ কম নয়। আমাদের প্রতিদিন ব্যবহৃত বহু শব্দই এসেছে পর্তুগিজ থেকে। যেমন- বারান্দা, জানালা, চাবি, গামলা, বালতি, বোতল, কেদারা, কামরা, আলমারি, গির্জা, সালোয়ার, কামিজ, আয়া, পেরেক, আলপিন, বোতাম, পাঁউরুটি, কপি (বাঁধাকপি), কাজু, ক্রুশ, মর্মর, পাদ্রি, পিরিচ, ফিতা, সাবান, তোয়ালে, বিধবা, যিশু, ইংরেজ, খ্রিস্টান, তামাক, চুরুট, পেয়ারা, আনারস, পেঁপে, জাম্বুরা, নিলাম, ফালতু, মিস্ত্রি, ইস্ত্রি, কার্তুজ, নোঙর, মাস্তুল, আলকাতরা, বয়াম, বেহালা, বোমা, গরাদ, গুদাম, ইস্পাত, কর্নেল, জুয়া, রশিদ, টাংকি, বাসন প্রভৃতি।
বর্তমানে পর্তুগাল-ব্রাজিল ছাড়াও কেপ ভার্দে, অ্যাঙ্গোলা, মোজাম্বিক, গিনি-বিসাউ এবং সাও টোমে ও প্রিন্সিপের সরকারি ভাষা পর্তুগিজ। এছাড়া পূর্ব তিমুর, নিরক্ষীয় গিনি এবং ম্যাকাওতেও যৌথ সরকারি (কো-অফিসিয়াল) ভাষার মর্যাদা রয়েছে এর।