ইউরোপের দেশগুলোতে নতুন করে বিপর্যয় ডেকে এনেছে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন। ইউরোপের প্রায় সব দেশেই ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ফলে অনেক দেশই নতুন করে আবারও লকডাউনে ফিরে যাচ্ছে বা ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করছে।
লন্ডনের অধিকাংশ করোনার কেসের পেছনে অতি সংক্রামক ওমিক্রনই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। এটি এখন পুরো ইউরোপেই ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে বেশিরভাগ দেশের সরকার নতুন বিধিনিষেধের কথা ভাবতে বাধ্য হচ্ছে।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) থেকে ব্রিটেনের সব ভ্রমণকারীর জন্য ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন জারি করেছে জার্মানি। গত শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) থেকে ব্রিটেনের সব পর্যটকের জন্য নিজেদের সীমান্ত বন্ধ রেখেছে ফ্রান্স। তবে ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে শুধু আন্তর্জাতিক ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞাই যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে গত রোববার (১৯ ডিসেম্বর) থেকে নতুন করে কঠোর লকডাউন জারি করেছে নেদারল্যান্ডস। আগামী ১৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অন্তত এই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে। অন্যসব দেশেও কঠোর বিধিনিষেধ জারির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এর আগে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হওয়ার পর একই দৃশ্য দেখা গেছে। তখনও অনেক দেশকেই নতুন করে বিধিনিষেধের আওতায় আসতে হয়েছে। মাঝের কিছু সময় পরিস্থিতি অনেকটাই ভালোর দিকে যেতে শুরু করেছিল। কিন্তু তার মধ্যেই আবারও নতুন ধাক্কা হয়ে এলো ওমিক্রন।
সম্প্রতি ফরাসি প্রধানমন্ত্রী জ্যাঁ ক্যাসটেক্স বলেন, করোনার পঞ্চম ঢেউ এসে গেছে এবং এটি পুরো উদ্যমে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ইউরোপে করোনার ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট বিদ্যুৎগতিতে ছড়িয়ে পড়ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। প্রতি দুই বা তিনদিনে ওমিক্রনের কারণে সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অপরদিকে ফরাসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওমিক্রনের কারণে ক্রিসমাসের মধ্যেই ফ্রান্সের সংক্রমণ বেড়ে যেতে পারে।
ওমিক্রন ডেল্টার চেয়ে কম গুরুতর হলেও (যা এখনও স্পষ্ট নয়) সামনের দিনগুলোতে সংক্রমণের কারণে গুরুতর রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। সংক্রমণের কারণে অনেক সম্মুখ সারির স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও কাজ বন্ধ করে দিতে পারেন ফলে হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়তে পারে।
হাতে কিছু সময় পেতে এবং এই চাপ কমাতে ইউরোপীয় দেশগুলোর সরকারের হাতে দুটি প্রধান অস্ত্র রয়েছে। একটি হলো- সুরক্ষা বাড়ানোর জন্য বুস্টার ডোজ দেওয়া এবং অন্যটি হলো- সামাজিক যোগাযোগ সীমিত করা। এতে করে সংক্রমণ ধীর গতিতে হতে পারে বলে আশা করা যায়।
অনেক দেশেই বড় পরিসরে বুস্টার ডোজ শুরু হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের পশ্চিম প্রান্তের বিভিন্ন দেশ করোনারোধী টিকার প্রথম ডোজের ক্ষেত্রে ভালো অগ্রগতি দেখিয়েছে। পর্তুগালের প্রায় ৮৯ শতাংশ, স্পেনের ৮৩ শতাংশ, ফ্রান্সের ৮০ শতাংশ এবং ইতালির ৭৯ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। অপরদিকে ব্রিটেনের ৭৬ শতাংশ, জার্মানির ৭৩ শতাংশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের ৭৩ শতাংশ মানুষ টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন।মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কিছু অংশের তুলনায়ও এই হার অনেক কম।
এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে, বুস্টার ডোজ ওমিক্রনের বিরুদ্ধে বেশি সুরক্ষা দিতে সক্ষম। বুস্টার ডোজ দেওয়ার দৌড়ে এগিয়ে আছে ব্রিটেন। তারা তাদের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশের বেশি মানুষকে বুস্টার ডোজ দিতে সক্ষম হয়েছে। এই তুলনায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের মাত্র ১৮ শতাংশ, জার্মানি মাত্র ৩০ শতাংশ, ফ্রান্স ২৪ শতাংশ এবং ইতালি ২৩ শতাংশ মানুষকে বুস্টার ডোজ দিয়েছে।
নিজ দেশের নাগরিকদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে নেদারল্যান্ডস। সব বার, রেস্টুরেন্ট, সিনেমা হল, অনাবশ্যক দোকানপাট এবং অভ্যন্তরীন খেলাধুলার সেন্টার এক মাসের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেসব স্টেডিয়ামে খেলা দেখানো হবে সেখানে কোনো দর্শক থাকবে না। ক্রিসমাসে পরিবারগুলো তাদের বাড়িতে মাত্র চারজন অতিথিকে আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন। তবে ফ্রান্স নতুন করে এখনও লকডাউন বা কারফিউ জারি করেনি।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট