চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী রেলওয়ে স্টেশন যেন অপরাধীদের নিরাপদ অভয়ারণ্য। চুরি, ছিনতাই, যাত্রীদের ব্যাগ টানা-হেঁচড়া, মাদক কেনাবেচা ও পতিতাবৃত্তিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই, যা এখানে ঘটে না। সন্ধ্যার পর রেলস্টেশনসহ আশপাশের এলাকা আরও ভয়াবহ অবস্থা ধারণ করে। কোনো ধরনের রাখঢাক ছাড়াই প্রকাশ্যে চলে মাদক কেনাবেচা।পুলিশের নাকের ডগায় এসব অপরাধ ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে স্থানীয় জনতার।
রেলে চলাচলকারী সাধারণ যাত্রীসহ স্থানীয়দের অভিযোগ,রেলওয়ে স্টেশনের মূল ভবন ও প্ল্যাটফর্মগুলোর বেশিরভাগ জায়গা ঘিরে সক্রিয় রয়েছে একাধিক ভাসমান অপরাধী চক্র। বিভিন্ন সময়ে যাত্রী ও পথচারীদের মূল্যবান সামগ্রী ছিনতাই করে তারা। তবে খুব কমসংখ্যক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন। যারা অভিযোগ করেন তারাও যথাযথ প্রতিকার পান না। ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, সাধারণত বাস ও লঞ্চ স্টেশনগুলোতে অপরাধীদের আনাগোনা বেশি থাকলেও পাহাড়তলী রেলওয়ে এলাকা যেন সব ধরনের অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য।
সরেজমিন দেখা যায়, পাহাড়তলী স্টেশন থেকে শুরু করে পুরো রেলওয়ে এলাকা দুই চার জনের ভাসমান মানুষের জটলা।এই জটলার পাশে প্রকাশ্যে গাঁজা বিক্রি করছেন চার-পাঁচজন নারী ও পুরুষ। বিক্রেতাদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি। পেশাদার মাদকসেবীদের পাশাপাশি রিকশাচালক ও নিম্ন আয়ের মানুষদের গাঁজা ও ইয়াবা কিনতেও দেখা গেছে।
স্টেশনের এক ঝাল মুড়ি বিক্রেতা বলেন, এখন কি দেখবেন সন্ধ্যার পর রেলস্টেশন থেকে একে খান রেল লাইন পর্যন্ত রেললাইন ঘিরে মাদকের আখড়ায় পরিণত হয়। এখান থেকে খুব সহজেই ইয়াবা, ফেনসিডিল ও গাঁজাসহ প্রায় সব ধরনের মাদক পাওয়া যায়। এ ছাড়া রেললাইনের পাশের বস্তিতেও কম টাকায় সহজে চোলাইমদ পাওয়া যায়। এ সময় পাহাড়তলী স্টেশন এর মূল গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে টিকেট কাউন্টারসহ প্ল্যাটফর্মেও দেখা গেছে ভাসমান অপরাধীদের আনাগোনা। এবং ইস্টিশন এরিয়ার ভিতরেই আশপাশে তারা ঘোরাফেরা করছে। এসব অপরাধীর টার্গেট ট্রেনের যাত্রীরা। তবে বড় টার্গেট হলো নারী ও বয়স্ক পুরুষ যাত্রী, যা মুহূর্তেই কেড়ে নিতে পারে আপনার ও আমার মূল্যবান সম্পদ।
অভিযোগ রয়েছে, ট্রেন ছাড়ার সময়ে জানালার পাশে থাকা যাত্রীদের মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস ছোঁ মেরে নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ছাড়া ট্রেনের ভেতরে ও ছাদেও চলে ছিনতাইয়ের ঘটনা। সাধারণত স্বল্প আয়ের মানুষ টিকেট না পেয়ে ছাদে চড়ে বসেন। অনেক সময়ে ছিনতাইয়ে বাধা দিলে ছুরিকাঘাত করে চলন্ত ট্রেন থেকে তাদের ফেলে দেওয়া হয়। অতীতে এবং বর্তমানে এমন ধরনের ঘটনা ঘটেছে।
স্টেশনের পাশে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, স্টেশন ঘিরে অনেক অপরাধী চক্র সক্রিয়। তারা শিশুদের দিয়ে ভিক্ষাবৃত্তি, যাত্রী হয়রানি, ছিনতাই ও মাদক বিক্রি করায়। পুলিশের চোখের সামনে এসব অপরাধ ঘটলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না। আবার মাঝেমধ্যে কয়েকজন ধরা পড়লেও তারা ছাড়া পেয়ে একই কাজ শুরু করে।
রাজিফা সুলতানা নামে এক পথচারী বলেন, অফিস থেকে সন্ধ্যার পর বাসায় ফেরার সময় অনেক ঝুঁকি নিয়ে পথচারী ফুটওভার ব্রিজ পার হতে হয়। স্টেশন ছাড়াও সিঁড়িতে চলাচলরত পথচারীদের মোবাইল ফোন ও ভেনিটি ব্যাগ ছিনিয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায় ভাসমান ছিনতাইকারীরা। এ ছাড়া রাতে সিঁড়িতে বসে প্রকাশ্যে মাদক সেবন করে।
পাহাড়তলী রেলওয়ে পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ দায়িত্বে থাকা নোমান এবিষয়ে জানান, স্টেশন ঘিরে থাকা সব ধরনের অপরাধীদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অভিযান চালানো হয়। স্টেশনের ভেতরে ও বাইরে সবসময় রেলওয়ে পুলিশ নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে থাকে। কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। তবে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সঠিক নয়।
মাদক বিক্রির বিষয় জানতে চাইলে পাহাড়তলীর রেলওয়ে পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ নোমান বলেন, মাদকের বিষয়ে আমার নলেজে ছিল না, আপনি যখন বলেছেন আমি সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিব, ওরা কখন মাদক খায় এবং কখন বিক্রি করে আমার চোখে কখনো পড়ে নাই, তবে আপনি আমার নলেজে দিয়েছেন আমি বিষয়টা দেখব, ছিনতাইকারীর বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে পুলিশ ফাড়ির নোমান বলেন, আমার এখানে তেমন ছিন্তায় হয় না,তবে একটা বিষয় আমার নজর এসেছিল একটা মোবাইল ফোন ছিন্তায় হয়েছিল,আমি উদ্ধার করে দিয়েছিলাম লাকসাম এর একজন মহিলার মোবাইল ফোন ছিল,এবং তিনি আরো বলেন আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এ বিষয়ে আমি নতুন করে আবার দেখবো এবং তার পাশাপাশি বলতে চাই আমাদের লোকবল অনেক কম তারপরেও আমরা চেষ্টা করবো।